মিলন সিদ্দিকী : ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি:
ঢাকার ধামরাইয়ে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তারেক দালাল বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ধামরাই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নার্গিস আক্তার (৪৫) নামে এক নারী। সম্প্রতি তিনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বরাবর অভিযোগটি দাখিল করেন।অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী নার্গিস আক্তারের স্বামী মো. আব্দুস সামাদসহ আরও দুইজন—মাসুদ রানা (পিতা: আব্দুস সামাদ), আশিক (পিতা: মোয়াজ্জেম) ও মাহাবুব (পিতা: জালাল উদ্দিন), গ্রাম বাসনা ও চাওনা—পরিবারের সদস্যদের ইউরোপে পাঠানোর আশ্বাসে স্থানীয় কয়েকজন দালাল বিভিন্ন ধাপে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।প্রথম দফায় কুশুরা ইউনিয়নের বনবাড়ী এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আদম ব্যাপারী তারেকের মাধ্যমে তিনজনের কাছ থেকে মোট ১৫ লাখ টাকা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় আরও টাকা নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে অভিযুক্তরা প্রায় ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়েছে।ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানান, তাদের লিবিয়ায় পাঠানোর পর সেখানে একটি ঘরে বন্দি করে খাবার বন্ধসহ শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরিবারের সদস্যরা উপায়ান্তর না পেয়ে দফায় দফায় আরও টাকা দিতে বাধ্য হন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রথমে লিবিয়ায় পাঠানোর কথা বলা হলেও পরে ইতালি নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। এ জন্য ব্যাংকিং ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা আদায় করা হয়। ইসলামী ব্যাংকের কালামপুর শাখা ও কুরিয়ার ব্যবস্থার মাধ্যমে লেনদেনের তথ্য অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
এ বিষয়ে বাসনা গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য সামাদ বলেন,আমি নিজে তারেক দালালের বাড়িতে গিয়ে সালিশে বসেছিলাম। সে স্বীকার করেছে প্রথমে তিনজনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছে। এক পর্যায়ে তারেকের একজন গার্জিয়ান টাকা পরিশোধের দায়িত্ব নিলেও পরে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রতারকদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত, কারণ তারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছে।স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন,
“তারেকের প্রতারণার কারণে তিনটি পরিবার আজ পথে বসেছে। তাদের দৈনন্দিন জীবন চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আমরা গ্রামবাসী হিসেবে খুবই মর্মাহত এবং এই প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”
সরেজমিনে কুশুরা বনবাড়ীগ্রামে গেলে অভিযুক্ত তারেকের কাকা জহিরুল ইসলাম বলেন,লিবিয়ায় পাঠানোর জন্য কিছু টাকা দেওয়া হয়েছিল, এটা ঠিক। তবে বাকি টাকার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। তারেক বর্তমানে বাড়িতে নেই, পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।এ বিষয়ে অভিযুক্ত তারেকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি কাউকে বিদেশে পাঠাইনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হতে পারে।”এ কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নাজমুল হুদা খান,বলেন,
আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।